Checkout Our Blogs
উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখাটাই সবচে বড় ভুল ছিল ??
গল্পটা অভির। ছোট থেকেই খাবার এর প্রতি দুর্বল। তবে পার্থক্য হচ্ছে সবাই যেখানে বিভিন্ন খাবার এর জন্য বায়না করে মার কাছে, অভি চেষ্টা করে নিজে কিছু বানাতে! তার বন্ধুরা খেলাধুলার খবরে মজা পেতো আর গল্প করতো আর অভি রান্না সংক্রান্ত যেকোনো খবরে আনন্দিত হতো। স্বপ্ন দেখতে থাকে খাবার বানিয়ে একদিন মানুষকে মুগ্ধ করবে।
অভির সবচে ভালো দিক ছিল এই স্বপ্নটাকে সাথে নিয়ে চলেও কখনো নিজের লেখাপড়াকে ছাড় দেয়নি। বিবিএ কমপ্লিট করে এখন এমবিএ করছে হিউম্যান রিসোর্সে ম্যানেজমেন্টে। কিন্তু যখন লেখাপড়াটা শেষের দিকে, অভি বুঝতে পারলো শুধু খাবার বানানোর চিন্তায় তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! যখন সবাই চাকরির জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, অভি নিতে পারছেনা! একদমই পারছেনা! তার সমস্ত চিন্তা সে তার স্বপ্নের ব্যবসায় মেনুতে কেমন খাবার রাখবে, খাবার কিভাবে বানাবে, ইন্টেরিয়র কিভাবে সাজাবে, কাস্টমার বা ক্রেতাদের কিভাবে ভিন্নতার ছোয়া দিবে, এসব নিয়ে!
বাসা থেকে এতদিন কেউ কিছু না বললেও, চারপাশ থেকে যখন বিভিন্ন মানুষের চাকরির খবর আসতে থাকে, অভির গার্জেন রাও বিভিন্ন খোঁচামূলক প্রশ্ন করতে থাকে। অভি বুঝতে পারে তার স্বপ্নটা কেউ বুঝতে পারছেনা, কিন্তু অভিও ঠিক করে, সবার মতো এক রাস্তায় হাঁটবে না।
ফেসবুকে একটা পেজ খুলে তার দীর্ঘদিনের যেসব খাবার নিয়ে গবেষণা ছিল সেগুলো উপস্থাপন করতে থাকে। এরপর যা হতে থাকে সেটা অভির চিন্তায়ই ছিলোনা কখনো। প্রথম শুরু করে বাবা - "ছেলে তাহলে আমার এখন বাবুর্চি হয়ে গেলো? আমার আর সোসাইটিতে মুখ দেখানোর উপায় থাকলোনা!" এরপর মা বলে - "সবার ছেলে স্বপ্ন দেখে ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করবে, মাস শেষে লক্ষ টাকা কমাবে আর আমার ছেলে আমার রান্নাঘর দখল করার স্বপ্ন দেখে!"
হটাৎ করেই অভির মনে হলো মানুষ এই পৃথিবীতে অনেক বেশি একা। পরিবার একটা সাপোর্ট হিসেবে থাকে কিন্তু মনের ইচ্ছাগুলো এক ছাদের নিচে যুগ যুগ ধরে থাকা মানুষগুলোও কখনো জানেনা, হয়তো জানতেও চায়না! প্রতিদিন অন্তত কোনো না কোনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশী একবার করে তাকে জানাতো কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত সে নিয়েছে, কিভাবে সে তার মা বাবার স্বপ্ন ভেঙে তাদের সমাজে অপমানিত করছে! অভির কাছে অনেক জবাব থাকলেও সে চুপ থাকতো কিন্তু মনে রাখতো ঠিকই।
সময় কেটে যাচ্ছিলো, অভি চারপাশ থেকে খোঁচামূলক কথা শুনতে শুনতে যতটা না প্রভাবিত ছিল তার চেয়েও বেশি কষ্টে ছিল বাসায় আপন ভাইবোন আর বাবা মার আচরণে। হোম ডেলিভারির কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে শূন্য টেবিল দেখে এক গ্লাস পানি খেয়েও ঘুমিয়েছে অনেকদিন, অভিমানে কিছু বলেওনি।
ভালোলাগার জিনিস ছিল একটাই, তার কাস্টমারদের থেকে পাওয়া মন্তব্য আর ভালোবাসা। প্রতিটা ক্রেতা ছিল অভির জন্যে আশীর্বাদ, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার অপরিচিত খাবারগুলো আবার অভি পরিচিত করে দিচ্ছিলো কর্মব্যস্ত মানুষের জীবনে। প্রতিটি কাস্টমার একবার অর্ডার করে আবার ফিরে আসতো অনেক বেশি অর্ডার নিয়ে। প্রথম দিকে খাবারের দাম কম রাখলেও ধীরে ধীরে আর পারছিলোনা, পরিশ্রম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছিলো, খাবারের দাম বাড়ালেও তার কাস্টমাররা কোনো অভিযোগ করেনি। এখন অভির একটাই প্ল্যান দুজন লোক নিয়োগ করে একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার ভিন্ন এক জায়গায়।
টাকা পয়সা যা পাচ্ছিলো প্রথম দিকে খরচ করেনি ভাবছিলো বাবা মার জন্য ট্রেন্ডি দুটো স্মার্টফোন কিনবে। নিজের শখ গুলো কিছুই পূরণ করেনি। কিন্তু একদিন সব পরিকল্পনা পাল্টে গেলো। বাসায় এসে দেখে মা বাসায় নেই। ছোট ভাই বোন গুলো ভীষণ বেয়াদবি করে কথা শুরু করে দিলো যে মা চলে গেছে গ্রামে, সেদিনই ফিরবে যেদিন অভি এসব বাবুর্চির কাজ ছেড়ে ভালো একটা চাকরি শুরু করবে!
অভির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সেই রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো খুন করবে নিজের স্বপ্নকে। যাদের সাথে, যাদের জড়িয়ে বেঁচে আছে তাদের এই চাপা কষ্ট আর উপেক্ষা আর সহ্য করার মতন না। অভি তার ফেইসবুক পেজ থেকে সব ছবি, পোস্ট আর চমৎকার সব রিভিউ ডিলিট করে দিলো, এক ফোটা কাদঁলোনা, কোনো অনুভুতিই আর হচ্ছেনা, প্রচন্ড জেদ চেপে গেলো তার। সে এখন পরিবারের জন্যেই বাঁচবে কিন্তু মনে মনে ওয়াদা করলো একটা কথাও কারো সাথে আর বলবেনা। অনেক টাকা উপার্জন করবে আর বাসার সবাইকে দিবে কিন্তু মনের কোনো কথা কারো সাথেই সে আর বলবে না।
অভি ছাত্র ভালো হওয়ায় ৩ সপ্তাহের ভেতরেই একটা "ভালো চাকরি" পেয়ে যায়। বেতন বেশ ভালো, যেখানেই যায়, মানুষ এখনো খোঁচা দিতে থাকে, তারপর লোকদেখানো প্রশংসাও করে যায়। অভি আগের মতোই চুপ। ঘরে সবাই খুশি। এটাই তো সে চাচ্ছিলো। বাড়ির প্রয়োজনীয় সব খরচে এখন অভির যোগদান সবচে বেশি। বাবা মা ভাই বোন সবাই এখন গর্ব করে অভিকে নিয়ে। কিন্তু অভি?
প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার চোখ ভিজে যায়। কেন ভিজে যায় সেটা সে হয়তো জানে কিন্তু নিজেকেও আর বুঝতে দেয়না। স্বপ্নের মাঝে আগের হাসি খুশি অভিকে দেখে কিন্তু সকালে অফিসে যেতে হবে দেখে ঘুম থেকে উঠে সেই স্বপ্ন নিয়েও আর ভাবেনা। মনের মাঝে ক্ষোভ তার একটা কথাই বলে - স্বপ্ন দেখাটাই জীবনের সবচে ভুল ছিল। এই সমাজ আর পরিবার তার উদ্যোক্তা হওয়াকে উৎসাহিত না করে প্রতি পদে পদে নিরুৎসাহিত আর অপমানিত করেছে। যা ছিল অভির জন্যে আনন্দের সেটাই ছিল সবার জন্যে চক্ষুশূল। এখন অভির সৃজনশীলতা আর দেখানোর সুযোগ নেই, অভির ভেতরের ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়ার সুযোগ নেই, বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে পরিচিত করার উপায় নেই, এই সবকিছুর বিনিময়ে আছে হাহাকার আর নীরব কান্না। যেটা বোঝারও কেউ নেই।
গল্পটি অভির হলেও অভির সাথে আমরা অনেকেই হয়তো নিজেকে মেলাতে পারি, তাইনা? কখনো যদি আপনার মনে হয় যোগ্যতা, স্বপ্ন আর পরিবারের নানামুখী চাপ কে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে একটা পেশা নির্বাচন করা উচিত আপনার জানা প্রয়োজন, আমরা আছি আপনার অপেক্ষায়। আপনি নিঃসংকোচে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন এই ঠিকানায়। আমাদের অভিজ্ঞ টিম আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তুত।
Contact us:
+8801711085680
Tags & Meta tags:
উদ্যোক্তা, ব্যবসায় উদ্যোক্তা, ব্যবসায় উদ্যোক্তার গুণাবলী, একজন ব্যর্থ উদ্যোক্তার গল্প, সফল হতে হলে যা করতে হবে, সফল মানুষ, সফল উদ্যোক্তা, কেন উদ্যোক্তা হবেন,